বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের তিলপাড়া গ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত সড়কটি বিয়ানীবাজার উপজেলার। প্রায় ৮ কিলোমিটার এই সড়কটি সম্প্রতি দুই মেয়াদে সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নিয়ন্ত্রণাধীন এই সড়কটিতে ব্যক্তি উদ্যোগে গতিরোধক (স্প্রিড বেকার) স্থাপন করা হয়েছে । দুর্ঘটনা কমানোর কথা বলে গতিরোধক দেয়া হলেও অথচ ঘটছে তার উল্টো। অপরিকল্পিত এই গতিরোধকটির কারণে প্রতিদিনই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। হতাহত হচ্ছেন অনেক ব্যক্তি।

এলাকাবাসী ও দুর্ঘটনার শিকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বছর খানেক আগে সড়কটির খলাগ্রাম থেকে তিলপাড়া গ্রামের শেষ সীমানা পর্যন্ত সংস্কার করা হয়। সংস্কারকাজ শেষে মাথিউরা ইউনিয়নের কান্দিগ্রাম এলাকার স্থানীয় ফজলুর রহমান ফজলু মেম্বারের বাড়ির সামনে এলজিইডি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের অগোচরে একটি গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। সড়কটির যেই স্থানে গতিরোধক দেওয়া হয়েছে তার উভয় পাশেই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ মোড়, সেখানে একটি গতিরোধক দিলেই হয়তোবা মানা যেতো। কিন্তু অপরিকল্পিতভাবে বাড়ির সামনে গতিরোধক স্থাপন করে সড়ককে দুর্ঘটনা প্রবন করা হয়েছে। একই সাথে গতিরোধকের উপর ‘জেব্রাক্রসিং’ না থাকায় যানবাহন চালকরা অনাকাঙ্খিত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কটির দাসগ্রাম মসজিদ, বিজিবি ৫২ ব্যাটালিয়ন ক্যাম্প, মাথিউরা বাজার (ভাটাবাজার) মাদ্রাসা, মসজিদ ও স্কুল, নালবহর বাজার, স্কুল ও মসজিদের সামনে দুটি করে গতিরোধক রয়েছে। তবে সেসব জায়গায় জনগুরুত্বপুর্ণ হাট-বাজার, মসজিদ, স্কুল ও মাদ্রাসা রয়েছে বিধায় গতিরোধক স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু একই সড়কের কান্দিগ্রাম অংশে স্থানীয় বাসিন্দা ফজলুর রহমান ফজলু নিজ বাড়ির সামনেই অপ্রয়োজনে বসানো হয়েছে একটি গতিরোধক। সড়কটি দিয়ে বিয়ানীবাজারসহ জুড়ী, বড়লেখা ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করেন। এই গতিরোধক সম্পর্কে ধারণা না থাকায় অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন- তার উপর নেই ‘জেব্রক্রসিং!’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৩টার দিকে মোটরসাইকেলযোগে যাতায়াত করার সময় সড়কের এই গতিরোধকে দুর্ঘটনার শিকার হন মাথিউরা ইউনিয়নের সুতারকান্দি গ্রামের সোহেল আহমদ নামে এক যুবক। গতিরোধকটি সম্পর্কে পূর্ব থেকে অবহিত না হওয়ায় দুর্ঘটনায় তার মোটরসাইকেল ধুমড়ে মুচড়ে যায় এবং দুই পায়ের হাটুতে মারাত্মক জখম হয়। পরে তিনি স্থানীয় চিকিৎসালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন।

এসময় সড়কটি ব্যবহারকারী কয়েছ উদ্দিন নামে এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন তিন-চারবার এই সড়ক দিয়ে যাতায়াত করি। সব সময় তো এই গতিরোধকটি সম্পর্কে খেয়াল থাকে না। একটু অসাবধান হলেই ঘটে দুর্ঘটনা।

সরকারি রাস্তায় ব্যক্তি কর্তৃক নিজের বাড়ির সামনে গতিরোধক স্থাপন যৌক্তিক কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) বিয়ানীবাজার শাখার আহ্বায়ক সাংবাদিক সুফিয়ান আহমদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটা মোটেও উচিত নয়। এসব অপরিকল্পিত স্প্রিডবেকারের কারণে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটে। অপরিকল্পিত সকল স্প্রিডবেকার দ্রুত অপসারণ করতে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তিনি।

বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রকৌশলী মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অপরিকল্পিত গতিরোধকের কারণে সড়কে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। আমরা হাট-বাজার কিংবা মসজিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যত্র গতিরোধক স্থাপনে সবাইকে নিরুৎসাহিত করি। তিনি বলেন, বিয়ানীবাজার-চন্দরপুর সড়কের কান্দিগ্রাম অংশে ব্যক্তি উদ্যোগে গতিরোধক স্থাপনের বিষয়টি আমাদের জানা নেই। হয়তোবা কেউ আমাদের অগোচরে এই কাজটি করেছে।, যেটা একদম উচিত হয়নি।

এ ব্যাপারে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমী মাহবুব বলেন, কোন সড়কেই অপ্রয়োজনে গতিরোধক স্থাপন করা উচিত নয়। এলজিইডির রাস্তায় ব্যক্তিগত গতিরোধক স্থাপনের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। এখন বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

ছেলে অসুস্থ, দিশেহারা মা-বাবা : পাশে দাঁড়ালো বিয়ানীজারের ‘স্পন্দন’